সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

কৃষি ব্যাংকে ৭ শতাধিক অফিসার নিয়োগ

কৃষি ব্যাংকে ৭ শতাধিক অফিসার নিয়োগ
তরুণ প্রজন্মের পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর শীর্ষে অবস্থান করছে। এর প্রধান কারণগুলো হল- ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশ রয়েছে। বেতন কাঠামো ইর্ষণীয়। এর বাইরেও আছে বছরে বেশ কয়েকটি ইনসেনটিভ যা অন্য বহু প্রতিষ্ঠানে নেই। ব্যাংকারদের সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি রয়েছে চাকরি নিরাপত্তা এবং পেনশনের ব্যবস্থা। রয়েছে হাউস লোন, কার লোন। মোটকথা কেউ ব্যাংকে চাকরি পেলে তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত। আমাদের দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ব্যাংকগুলোর শাখাও। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে এসব ব্যাংকে প্রতি বছর প্রচুর জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তাই আমাদের উচ্চ শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশের কর্মসংস্থান হচ্ছে ব্যাংকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা পদে ৭০৪ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বেতন-ভাতা : জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা ১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা স্কেলে বেতন পাবেন। পাশাপাশি দেয়া হবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। মো. সোহেল আকন জানান, কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা, প্রায় ৬০ লাখ টাকা ঋণ এবং চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই পদোন্নতির সুবিধা পান।

আবেদনের যোগ্যতা : কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকলে অফিসার পদে আবেদন করা যাবে। এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষায় অন্তত একটিতে থাকতে হবে প্রথম বিভাগ অথবা সমমানের গ্রেড। আবেদনকারীর তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে জিপিএ ৩.০০ বা তদূর্ধ্ব প্রথম বিভাগ, জিপিএ ২.০০ থেকে ৩.০০-এর কম দ্বিতীয় এবং জিপিএ ১.০০ থেকে ২.০০-এর কম হলে ধরা হবে তৃতীয় বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৪ পয়েন্ট স্কেলে অর্জিত সিজিপিএ ৩.০০ বা তদূর্ধ্ব প্রথম শ্রেণি, ২.২৫ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩.০০-এর কম দ্বিতীয়, ১.৬৫ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ২.২৫-এর কম তৃতীয় শ্রেণী ধরা হবে। ৫ পয়েন্ট স্কেলে ৩.৭৫ বা তদূর্ধ্ব প্রথম, ২.৮১ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩.৭৫-এর কম দ্বিতীয় এবং ২.০৬৩ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ২.৮১-এর কম হলে ধরা হবে তৃতীয় শ্রেণী।

বয়স : ১ মার্চ ২০১৬ তারিখে আবেদনকারীর বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর। তবে আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর।

আবেদনের নিয়ম : আবেদন করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। অনলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের (https://erecruitment.bb.org.bd) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। প্রায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকে আবেদনের একই নিয়ম। ১৫ নভেম্বর ২০০৯ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিভি ব্যাংকে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে আবার নিবন্ধন করতে হবে না, সিভি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আবেদন করা যাবে। তবে নতুন আবেদনকারীদের আবেদনের আগে নিবন্ধন করতে হবে। প্রার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এসএসসি বা সমমানের সনদে যেভাবে লেখা আছে, অনলাইন ফরমে সেভাবে পূরণ করতে হবে। ফলাফলের ঘরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা। আপলোড করতে হবে ৬০০ বাই ৬০০ পিক্সেল ও সর্বোচ্চ ৮০ কিলোবাইটের ছবি এবং ৩০০ বাই ৮০ পিক্সেল ও সর্বোচ্চ ৬০ কিলোবাইটের স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি। অনলাইনে আবেদন করার পর ট্র্যাকিং নম্বরযুক্ত ফরমটি সংরক্ষণ করতে হবে।

ডেটলাইন : ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। চলবে ৭ জুন পর্যন্ত।

পরীক্ষার মানবণ্ট প্রবেশপত্রে : ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হবে। প্রবেশপত্রে পরীক্ষার মানবণ্টন উল্লেখ থাকবে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। ১০০ নম্বরের বহু নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে। সময় এক ঘণ্টা। কেবল উত্তীর্ণরাই অংশ নিতে পারবেন লিখিত পরীক্ষায়। ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সময় বরাদ্দ থাকে দুই ঘণ্টা।

বাড়তি যোগ্যতা : ব্যাংকার হওয়ার জন্য একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি যোগ্যতাও থাকা চাই। ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটাদাগে আবেদনকারীর বিষয়গত জ্ঞান কতটা গভীর তা যাচাই করা হয়ে থাকে। তার ফাংশনাল নলেজ খতিয়ে দেয়া হয়। ভাইবাতে প্রার্থীর জড়তা ও প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বিধাদন্দ্ব নেগেটিভ মার্কিং করা হয়। এজন্য তার বাচনভঙ্গিও স্মার্ট হওয়া জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকা চাই অটুট। এ ছাড়া প্রার্থীর কমিউনিকেশন স্কিল, ইংরেজি দক্ষতা, কম্পিউটারে পারদর্শিতা, সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব গুণাগুণ, দায়িত্ববোধ, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা সর্বোপরি সত্যিই তিনি কাজটির জন্য উপযুক্ত কি না সে বিষয়গুলো যাচাই শেষেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়।

কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রার্থীকে কোনো বিষয়গুলোতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত এ বিষয়ে জানতে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন ব্যাংকারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, ব্যাংকসহ অন্যান্য যে কোনো চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের সাবজেক্টটিভ নলেজ কতটা আছে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। তাই যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীকেই তার বিষয়গত জ্ঞানের গভীরতা অর্জন করতে হবে। প্রার্থীকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও দেশীয় অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই অর্থনৈতিক সূচক, অর্থনৈতিক সমীক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। প্রার্থীর কিছুটা হলেও ব্যাংকিং জ্ঞান থাকা চাই। এ ছাড়া সাধারণ জ্ঞান বিশেষ করে সাম্প্রতিক ও সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো থেকেও ভাইবাতে প্রশ্ন হয়ে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত এ ধরনের প্রশ্নও করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অর্থনীতি সম্পর্কে তার ধারণা-ভাবনা বিচারে নেয়া হয়। নিয়োগ পেলে কীভাবে কাজ করবেন, কেন ব্যাংকে চাকরি করতে চান- এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই ভাইবার আগে এসব বিষয়ে প্রার্থীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।

পরীক্ষা প্রস্তুতি : কৃষি ব্যাংকের গাজীপুর শাখার কর্মকর্তা আসিফ জাকারিয়া প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, বহু নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা অংশে ব্যাকরণ এবং সাহিত্য থেকে প্রশ্ন করা হয়। সাহিত্যে কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্যকর্ম, বিভিন্ন কবিতার চরণ, উপন্যাস বা গল্পের চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ব্যাকরণ অংশে আসে বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, সন্ধিবিচ্ছেদ, সমাস, শব্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, সমার্থক, বিপরীতার্থক ও পারিভাষিক শব্দ। লিখিত পরীক্ষায় থাকে অনুবাদ, সাম্প্রতিক বা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে রচনা বা অনুচ্ছেদ লিখন।

কৃষি ব্যাংকের সাভার শাখার কর্মকর্তা নিশাত নূর জানান, ইংরেজি বিষয়ে Fill in the blanks, Sznonym, antonym, phrases and idioms, Tense, Correct Spelling, Sentence Correction, Analogy থেকে প্রশ্ন আসে এমসিকিউ অংশে। একটি বিভাগ থেকে কয়েকটি করে প্রশ্ন থাকতে পারে। সমসাময়িক ইস্যুতে যাদের জানাশোনা ভালো তারা লিখিত পরীক্ষায় রচনায় ভালো করেন। ইংরেজি সাহিত্য অংশে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম, কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম তারিখ, জীবনী, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র ও বিশেষ উক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আর লিখিত অংশে ব্যাকরণ, পত্র, অনুবাদ ও রচনা লিখন বিষয়ে জোর দিতে ভুলবেন না।

সোনালী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সৌমিত্র সাহা বলেন, যে অংক ভালো পারে, ব্যাংক চাকরি তার জন্য। নিয়োগ পরীক্ষায় সে অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকে। তিনি জানান, যে কোনো ব্যাংকের পরীক্ষায় ভালো করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই আয়ত্তে থাকতে হবে। এমসিকিউ অংশে সহজে উত্তর করার জন্য শর্টকাট টেকনিক ব্যবহার করে নিয়মিত চর্চা করতে হবে। বিশেষ করে ঐকিক নিয়ম, শতকরা, পরিমাপ ও একক, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি ও পরিমিতি বিষয়ে। তাই আপনাকে এ-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে। এ ছাড়া লসাগু-গসাগু, বর্গ, সরল, মাননির্ণয় ও জ্যামিতিক সূত্র ও সংজ্ঞা তো আছেই।

সহায়ক বইপত্র : জনতা ব্যাংকে গত বছর নিয়োগ পাওয়া এক্সিকিউটিভ অফিসার নাহিদা সুলতানা বলেন, বিসিএসের প্রস্তুতি সহায়ক বই ব্যাংকের পরীক্ষায় অনেক কাজে আসবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনীর ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট গাইড দেখতে পারেন। আইবিএ-এমবিএ ভর্তি গাইড, জিম্যাট অফিশিয়াল গণিত ও ইংরেজি উভয় বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য দেখতে পারেন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য মাসিক তথ্যভিত্তিক পত্রিকা, তথ্যপ্রযুক্তির জন্য এইচএসসি পর্যায়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বই বেশ সহায়ক হবে।